২০২৬ সাল নাগাদ ৫০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হবে বাংলাদেশ

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড গ্লোবাল রিসার্চ ব্রিফিং

নিজস্ব প্রতিবেদক
চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ হার ধরে রেখে ২০২৫-২৬ অর্থবছর নাগাদ বাংলাদেশের জিডিপির আকার হবে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় হবে ৩ হাজার ডলার। গতকাল নিয়মিত বছরভিত্তিক গ্লোবাল রিসার্চ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের অর্থনীতিবিদরা।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আন্তর্জাতিক গবেষক দল পরিচালিত গ্লোবাল রিসার্চ ব্রিফিং একটি বার্ষিক কর্মসূচি। ব্যাংকটির এ ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্টে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈশ্বিকভাবে বিদেশী মুদ্রা বিনিময়ের বিষয়ে আলোচনা হয়। গতকাল বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল রিসার্চ ব্রিফিং সিরিজ ২০২১-এ গণমাধ্যমের সামনে গবেষণার তথ্য তুলে ধরে ব্যাংকটির গ্লোবাল রিসার্চ টিম। ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। এছাড়াও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রায় ৩০০ গ্রাহক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অধিবেশনে আলোচ্য বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন গ্লোবাল হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট এরিক রবার্টসন, হেড অব এএসএ এফএক্স রিসার্চ দিব্য দেবেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিবিদ সৌরভ আনন্দ। ব্রিফিংয়ে গবেষকরা জানান, মহামারী থাকা সত্ত্বেও গত বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা সম্পর্কে আশাবাদী ছিলেন। এখনো বিশ্বব্যাপী মহামারী চলমান। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে।

চলতি বছরের মধ্যে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পুনরুদ্ধার ও অভ্যন্তরীণ ব্যয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের জিডিপির অগ্রগতি হবে। এছাড়া মধ্যমেয়াদি প্রাক্কলনও আশাপ্রদ জানিয়ে গবেষকরা বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড, ডিজিটালাইজেশন এবং নগরায়ণকে কাঠামোগত চালক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন গতকাল। ২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে ৭ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হবে। এছাড়া ওই সময়ের মধ্যে জিডিপির আকার ৫০০ বিলিয়ন ডলার হওয়ার পাশাপাশি মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলারে উন্নীত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের গবেষকরা।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের গ্লোবাল হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট এরিক রবার্টসন বলেন, মহামারীর কারণে বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের গতি এবং বিতরণ অসম থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে একটি শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন করেছে। আশা করা যায়, একটি জোরদার টিকা কর্মসূচি এবং কৌশলগত অবকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে গ্র্যাজুয়েশনের দিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিবিদ সৌরভ আনন্দ বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রত্যাশিত জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আশা করা যায় ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হবে। দেশের রফতানি চাহিদা পুনরুদ্ধার, শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং সরকারি বিনিয়োগ দ্বারা এ প্রবৃদ্ধির বাস্তবায়ন সম্ভব।

সৌরভ আনন্দ আরো বলেন, আশা করা যায় ২০২৫-২৬ অর্থবছর নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হতে পারে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলারে উন্নীত করাসহ মধ্যম আয়ের পথে রূপান্তরের পূর্বশর্ত হলো নীতি সহায়তা।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, বাংলাদেশ সরকারের দূরদর্শী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপগুলোর কারণে বাংলাদেশ মহামারীকালের বিভিন্ন চড়াই-উতরাই বেশ ভালোভাবেই অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে আমরা আশাবাদী। এছাড়া টিকা কর্মসূচি যেহেতু অব্যাহত রয়েছে, তাই অর্থনীতিও ক্রমান্বয়ে ত্বরান্বিত হচ্ছে। এছাড়াও অপেক্ষাকৃতভাবে কম ডেবট-জিডিপি রেশিও দেশের জন্য একটি ফিসকাল রানওয়ে তৈরি করেছে। টেকনোলজি অ্যাডাপশন, টেকনোলজি ইনক্লুসিভনেস ও আইটিইএস সেক্টরের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে। সহায়ক নীতি বেসরকারি বিনিয়োগ এবং এফডিআইকে ত্বরান্বিত করবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ, সরকার ও আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আবারো আমাদের অসাধারণ স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করেছে। এর ফলে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে আমরা সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছি। একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ পরিবেশের মাধ্যমেই আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির যাত্রায় অগ্রসর হতে পারব।

Related Articles

Back to top button