‘সার্চ কমিটির দেওয়া নাম প্রকাশ না হলে সন্দেহ থেকে যাবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
ভালো মানুষ দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই হবে না, নির্বাচন কমিশনকে কাজ করার কর্তৃত্ব দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

তিনি বলেছেন, সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে কর্তৃত্ব দেওয়ার কথা আছে কিন্তু বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে না। বর্তমান বাস্তবতায় নির্বাচন কশিনকে সরকারের ওপর নির্ভর করতে হয়। আবার, দলীয় সরকার প্রশাসনকে ইচ্ছে মত ব্যবহার করতে পারে। এতে নির্বাচন কমিশন অনেক সময় অসহায় ভূমিকা পালন করে। এটাই নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার প্রধান কারণ। প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রস্তাব দিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু নতুন আইনে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। আমরা আবারো বলছি, নির্বাচন কমিশন আইন হচ্ছে নতুন মোড়কে পুরনো জিনিস।

সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টি আয়োজিত মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মার্তভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।

এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরো বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে সার্চ কমিটির দেয়া নামগুলো প্রকাশ না হলে মানুষের মাঝে একটা সংশয় ও সন্দেহ থেকে যাবে। কারণ সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাজে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ আছে প্রধানমন্ত্রীর । সার্চ কমিটির দেওয়া নামগুলো প্রকাশ হলে এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না। রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া নাম প্রকাশ না হলে প্রস্তাবিত নাম থাকবে নাকি বাইরে থেকে নাম অন্তর্ভূক্ত হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাবে। রাষ্ট্রপতি মাত্র দুটি কাজ ছাড়া বাকী সকল কাজই প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধানের পরামর্শ অনুযায়ী করেন। তাই সার্চ কমিটির দেওয়া নামগুলো প্রকাশ করা উচিৎ।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এসময় আরো বলেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। তাই নির্বাচন কমিশন এমন লোক দিয়ে গঠন করা উচিৎ, যারা সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে। গণতন্ত্র চর্চার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে গণতন্ত্র চর্চা শুরুই করা যায় না। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রবেশ দ্বার।

এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলন করতে আইন করেছিলেন। কিন্তু, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনে আন্তরিক নয়।

তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু আইনের সেবা তৃণমূলে পৌঁছে দিতে বিভাগীয় শহরগুলোতে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপণ করেছিলেন, কিন্তু ওই দুটি দলের আন্তরিকতার অভাবে সেটাও বাস্তবায়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে তাদের ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থ ছাড়া কিছুই বোঝে না। তারা মানুষের ভাষা বোঝে না। তাই দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে আবারো রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, অমর একশের ধারাবাহিকতায় আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। একুশের চেতনায় দেশ স্বাধীন হয়েছে। একুশ আমাদের সাহসি হতে শিক্ষা দেয়, একুশ মানে মাথা নত করা নয়।

তিনি বলেন, সকল জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের মানুষ প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধের রাজনীতি থেকে মুক্তি পেতে জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে।

জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আহ্বায়ক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের এমপি’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করনে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সদস্য সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. সাহিদুর রহমান টেপা, সুনীল শুভ রায়, এসএম ফয়সল চিশতী, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, নাজমা আখতার এমপি, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য শেরীফা কাদের এমপি, মো. সেলিম উদ্দিন, ড. আজহারুল ইসলাম শামীম, মনিরুল ইসলাম মিলন, হেনা খান পন্নি, নাজনীন সুলতানা, ভাইস চেয়ারম্যান এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু প্রমুখ।

Related Articles

Back to top button