লুটেরাদের কবলে রূপালী ব্যাংক

মাদার টেক্সটাইল লুট করেছে হাজার কোটি টাকা ! মাদারীপুর স্পিনিং এবং দালাল শফিক নিয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা !!

বিশেষ প্রতিবেদন
বিগত ৫-৭ বৎসরে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে স্মরণকালের নজিরবিহীন বিসমিল্লাহ গ্রুপ, হলমার্ক গ্রুপ ও বেসিক ব্যাংক কেলেংকারীতে সরকারের ইমেজ সংকটের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংক সমুহ যে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে তা থেকে বের হয়ে আসতে অধিকাংশ ব্যাংকের নতুন প্রশাসন হিমসিম খাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক সমুহের মধ্যে এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রূপালী ব্যাংকের। গুটি কয়েক লুটেরার হাতে তাদের প্রায় সমস্ত মুলধন এখন জিম্মি হয়ে রয়েছে এবং তা ফ্রেত পাবার কোন সম্ভাবনা নেই। সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিতে রয়েছে মাদার টেক্সটাইলের লুটে নেয়া প্রায় হাজার কোটি টাকা ।
সুযোগ্য ব্যাংকার ওবায়দুল্লাহ আল মাসুদ সেখানে এমডি হিসেবে যোগদান করায় অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষরা সেখানে আশার আলো দেখালেও গত দেড় বছরে করোনা সহ বিভিন্ন কারণে পাওনা আদায়ে খুব একটা সফল হতে পারেননি।
রূপালী ব্যাংকের সূত্রগুলো জানায়, চট্ট্রগ্রামের এস.এ গ্রুপ, নুর জাহান গ্রুপের ঋণের টাকা বাকী জীবনে পাবার সম্ভাবনা কম। স্থানীয় কার্যালয়ের ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান মাদার টেক্সটাইল, মাদারীপুর স্পিনিং মিলস, বেনিটেক্সসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ঋণই বিপাকে ফেলেছে ব্যাংকটিকে। এরমধ্যে মাদার টেক্সটাইলের ৬৫০ কোটি টাকা ঋণ পুনর্গঠন করে ২০৩০ সাল পর্যন্ত তা পরিশোধের সুযোগ দিয়েছে রূপালী ব্যাংক। এ কাজ করতে মাদার টেক্সটাইলের এমডি সুলতান আহম্মেদ ব্যাংকের বিগত প্রশাসনকে কয়েক কোটি টাকা ঘুষ দেন বলে রূপালী ব্যাংকে গুঞ্জন রয়েছে। নামে বেনামে মাদার টেক্সটাইলের কাছে এখন রূপালী ব্যাংকের পাওনা প্রায় হাজার কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুরে তাদের ফ্যাক্টরিসহ অন্যান্য সকল স্থাপনা মিলিয়ে মোট জামানত মূল্য ২০০ কোটি টাকার বেশী নয়। অর্থাৎ মাদার টেক্সটাইলের নিকট পাওনা টাকা ফেরত পাবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। রূপালী ব্যাংকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে মাদার টেক্সটাইলের এমডি সিঙ্গাপুরে স্থায়ী বসতি গড়েছেন এবং সেখানে বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। তিনি রূপালী ব্যাংকের আত্মসাৎকৃত টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার করেছেন বলে রুপালী ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এখন সে টাকা পরিশোধ করতে নানাহ কাহিনী রচনা করছেন তার ছেলের বউ যিনি এখন মাদার টেক্সটাইলের দায়িত্বে রয়েছেন।
মাদারীপুর স্পিনিং মিলসকে দেওয়া ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েও বিপাকে রয়েছে ব্যাংকটি। রূপালী ব্যাংকে একাধিক সুত্র জানিয়েছে তাদের ফ্যাক্টরী সহ অন্যান্য সকল স্থাপনা মিলিয়ে মোট জামানত মুল্য ১০০ কোটি টাকার বেশী নয় অথচ তাদের নিকট পাওনা এখন প্রায় ৫০০ কোটি টাকা । অর্থাৎ এ পাওনা টাকা ফেরত পাবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বিগত এমডি ফরিদ উদ্দিন এবং আতাঊর রহমান প্রধান এর সাথে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলে তারা শত শত কোটি টাকা লুটে নিয়েছে।
ব্রেকিং কোম্পানীর নামে লুটপাট : ঢাকার মতিঝিল কর্পোরেট শাখা এবং লোকাল অফিস সহ একাধিক শাখা থেকে শফিক নামের এক পেশাদার ব্যাংক দালাল চট্ট্রগামের একাধিক শিপ ব্রেকিং কোম্পানীর নামে পুরাতন জাহাজ আমদানী করে কয়েকশ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন যা আর ফেরত পাবার সম্ভাবনা নেই। কখনো নামে মাত্র জামানত কখনো জামানত বিহীন এ সব পুরাতন জাহাজ আমদানীর এলসি করতে শফিক ১৫% – ২০% নগদ টাকা দিয়ে সাবেক প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চট্ট্রগ্রামের গ্রাহকের নামে ঢাকার একাধিক শাখা থেকে এ জালিয়তি করেছেন। ব্যাংক লুটপাটের সুবিধার্থে তিনি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় বিদেশী সাজে আলিশান অফিস করেছেন যেখানে অন্যান্য শিপ ব্রেকিং কোম্পানীদের নিয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনা করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন এ ব্যাপারে একবার তদন্ত শুরু করলেও কালো টাকায় তা ধামাচাপা পড়ে যায়। এসব লুটেরাদের বিরোদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদের সাথে সখ্য গড়ে তুলেছেন নতুন প্রশাসন। ফলে পার পেয়ে যাচ্ছে ব্যাংক লুটেরারা ।
দালাল শফিক অগ্রণী ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখা থেকেও ষ্টিল মিলের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় শত কোট টাকা। এজন্য তিনি শাখা ব্যবস্থাপক মোজাম্মেলকে ঘুষ দিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। এসব টাকা আর ফিরে আসার কোন সম্ভাবনা নেই। শাখা ব্যবস্থাপক মোজাম্মেলকে কেন্দ্র করে অগ্রণী ব্যাংকে চলছে মহা লুটপাট। এখানে ভালো গ্রাহকদের সাথে জিএম অশ্লিল আচরন করলেও লুটেরাদের নিয়ে পিছনের খাস কামরায় দরজা বন্ধ করে খোশ গল্প করেন এবং লেন দেন শেষে তাদেরকে অনৈতিক সুযোগ সুবিধা দেয়ার বহু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button