লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে চাপে পড়তে পারে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের ঘটনাকে ক্ন্দ্রে করে রাজনৈতিকভাবে চাপে পড়তে পারে বিএনপি। এই লবিস্ট নিয়োগে যে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, তার উৎসসহ এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বের করতে তদন্তের চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।

সম্প্রতি সরকারের প্রকাশ করা তথ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির পক্ষ থেকে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি বেরিয়ে আসার পর দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা এবং পাল্টাপাল্টি বক্তব্য বিবৃতি আসছে। সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন নিজেদের স্বার্থে দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছে। এটা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড বলে অভিযোগ করছেন তারা। বিষয়টি তদন্ত হওয়া উচিত বলেও তারা মনে করছেন। বিশেষ করে এই লবিস্ট নিয়োগের অর্থ কোথা থেকে এসেছে, কাদের মাধ্যমে এই অর্থ পাঠানো হয়েছে, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে কারা জড়িত—সে সম্পর্কে তথ্য বের করা এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও ওই নেতারা জানান।

গত ২৬ জানুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জাতীয় সংসদে জানান, বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৮টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে। ২০১৪ সালে জামায়াত একটি ফার্ম নিয়োগ করে যুদ্ধাপারাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য। এজন্য তারা দেড় লাখ ডলার দেয়। বিচার বন্ধে তারা আরেকটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে নিয়োগ করে। বিএনপি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৭ লাখ ডলার প্রতি বছর প্রতি মাসে রিটেইনার ফি ১ লাখ ২০ হাজার ডলার ব্যয় করেছে। এই তথ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। বিএনপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত চারটি এবং ২০১৯ সালে একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপি তিনটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে।

এরপর গত ২৭ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশটাকে ধ্বংস এবং মিথ্যা অপবাদ আর অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা লবিষ্ট নিয়োগ করেছে। বিদেশি ফার্মকে এই কোটি কোটি ডলার তারা পেমেন্ট করলো—এই অর্থ কীভাবে বিদেশে গেল? এটা কোথা থেকে এলো, তার জবাব তাদের দিতে হবে। এর ব্যাখ্যা তাদের দিতে হবে। আজকে নির্বাচন সামনে নিয়ে এই লবিস্ট দিয়ে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এই টাকার দেওয়া হচ্ছে, এই টাকার পাই পাাই হিসেব আমরা আদায় করে ছাড়বো।

এদিকে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া বিএনপির বার্র্ষিক ব্যয়ের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের অর্থ ব্যয় উল্লেখ আছে কিনা—এ বিষয় জানতে চেয়ে এবং হিসাব না দেখালে বিষয়টি তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছিলেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ইসির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর জানানো হয়েছে, বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগে অর্থ ব্যয় সংক্রান্ত কোনো তথ্য নির্বাচন কমিশনে দলটির জমা দেওয়া হিসাবে উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে তদন্তের আইনি সুযোগ নেই নির্বাচন কমিশনের। তবে সরকারের অন্য কোনো সংস্থা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিলে কমিশন তা পর্যালোচনা করবে।

সরকারের একাধিক সূত্রে জানা যায়, বিএনপির এই লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টির তদন্ত সরকারের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। লবিস্ট নিয়োগের এই অর্থের উৎস এবং কীভাবে ও কাদের মাধ্যমে তা পাঠানো হয়েছে, সে সংক্রান্ত তথ্য অনুসদ্ধান করা হবে। তদন্তে তথ্য বেরিয়ে এলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও বিএনপি বড় ধরনের চাপের মধ্যে পড়বে বলে সূত্রগুলো আরও জানায়।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা তথ্য দিয়ে দিয়েছি। এখন সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা ঠিক করবেন। কোনো মন্ত্রণালয় তদন্ত করবে সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা অনেক পরিণত, তারাই ঠিক করবেন কী করতে হবে।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, একটি রাজনৈতিক দল দেশকে হেয় করার জন্য, দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য লবিস্ট নিয়োগ করে, এটা দুঃখজনক। আমি মনে করি তারা এক ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করেছে, অবশ্যই রাষ্ট্র বিরোধী। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা এই টাকা কোথা থেকে পেলো? এই টাকা যদি অন্যায়ভাবে বিদেশে পাঠায়, যে মানি লন্ডারিংয়ের আইন আছে, সেই আইনে তাদের বিচার হবে, বিচার হওয়া উচিত।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির যদি সততা থাকে, সহাস থাকে তাহলে তাদের বলা উচিত অর্থ কোথায় পেলো। তাদের সেই সততা নেই। টাকা খরচ করে দেশের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। এই টাকা কোথা থেকে এলো, জনগণের জানার আগ্রহ আছে। তদন্ত হলে সব বেরিয়ে আসবে।

Related Articles

Back to top button