রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের আয়োজন!
কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামে ওরিয়ন গ্রুপ!!

বিশেষ প্রতিবেদন
বিদ্যুতের চাহিদা এবং বিকল্প জ্বালানি না থাকা সত্তে¡ও বিশ^ব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয় রোধে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিবেশবাদি সংগঠন, দাতা সংস্থা ও বন্ধুরাষ্ট্রসমূহের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে ১০টি বড় মাপের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন বাতিল করেছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ ৬,৭৩১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা ছিলো। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা ছিলো উদ্যোক্তাদের। কিন্তু জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের অনুরোধে বাংলাদেশ সরে এসেছে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।
কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্তকে রিতিমত বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে বাংলাদেশের বিতর্কিত শিল্পগ্রুপ ওরিয়ন গ্রুপ তাদের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ার আয়োজন পাকাপোক্ত করেছে। বিতর্কিত এ গ্রুপটি তাদের ‘ওরিয়ন পাওয়ার ঢাকা-২ (OPDL-2)’ এর নামে এ লুটপাটের আয়োজন করেছে।
ওরিয়ন গ্রুপ মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ৬৩৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে চায়। কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ভবিষ্যতে বন্ধ হয়ে যাবে এ বিবেচনায়- ১০০% আমদানী নির্ভর কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরাসরি অর্থায়নে অধিকাংশ ব্যাংক অনিহা প্রকাশ করে। ফলে তারা চতুরতা দেখিয়ে দুবাই ভিত্তিক মাশরিক ব্যাংক থেকে অর্থায়ন নিশ্চিত করে। এ জন্য মাশরিক ব্যাংক বাংলাদেশের যে কোনো রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি দাবি করে।
মাশরিক ব্যাংকের চাহিদা মোতাবেক রাষ্ট্রায়ত্ব অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দিচ্ছে। গ্যারান্টির শর্তানুসারে অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক স্থানীয় মুদ্রায় ফান্ডেড ঋণ এবং এসবিএলসির (৫৩৫ মিলিয়ন ডলার ) মাধ্যমে নন ফান্ডেও ঋণ দিবে। বৈদেশিক যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ সকল কাজের জন্য ঋণ দিবে আল মাশরিক ব্যাংক। সম্প্রতি ওরিয়নের তেজগাঁও অফিসে শীর্ষ কর্তাদের উপস্থিতিতে এ সংক্রান্ত চুক্তি হয় ওরিয়ন ও অগ্রণী-জনতা ব্যাংকের সাথে। একাধিক বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে জানিয়েছে ৬৩৫ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি ব্যয় হওয়ার কথা। মাশরিক ব্যাংকের অতিরিক্ত ঋণের একটা বড় অংশই ওভার ইনভয়েসিং করে উদ্যোক্তাদের পকেটে যাবে শুরুতেই ।
জলবায়ু বিপর্যয় রোধে যেখানে ১০টি কয়লাভিত্তিকি প্রকল্প সরকার বাতিল করেছে সেখানে এটাও বাতিল তালিকায় চলে আসবে যে কোনো সময়ে। এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন মাঝপথে থেমে গেলে বা উৎপাদনে আসার পরও বন্ধ করে দেয়া হলে আল মাশরিক ব্যাংকসহ সবার ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হবে অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক। তখন রাষ্ট্রায়ত্ত¡ ব্যাংক সমূহের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কেহই হয়ত চাকরিতে থাকবেন না। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হবে রাষ্ট্রায়ত্ত¡ ব্যাংকগুলো। অথাৎ এটাও লুটের আওতায় চলে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত¡ ব্যাংকের একজন শীর্ষকর্তা বলেছেন জনঅর্থের হরিলুট বন্ধ না হলে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন থেমে যাবে। রাজনৈতিক চাপে পড়ে ব্যাংকগুলো এগুলো করতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি আরো বলেন ওরিয়নের এ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রও আজ অথবা কাল বন্ধ হয়ে যাবে কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকসমূহকে ধ্বংস করে যাবে।
সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় আছে ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যার ৩৫% গ্যাস ও এলএনজি নির্ভর, ৩৫% কয়লা নির্ভর, ১৫% আমদানিকৃত নবায়নযোগ্য জ¦ালানি, ১০% আনবিক শক্তি এবং ৫% জ¦ালানি তেল থেকে।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় যে কয়টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করছে তার মধ্যে রয়েছে- পটুয়াখালীর ৬৬০ মে.ওয়াট, উত্তরাঞ্চলের ১২০০ মে.ওয়াট, মাওয়ায় ৫২২ মে.ওয়াট, ঢাকায় ২৮২ মে.ওয়াট, চট্টগ্রামে ২৮২ মে.ওয়াট, খুলনায় ৫৬৫ মে.ওয়াট, মহেশখালীতে ১৩২০ মে.ওয়াট, বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প ৭০০ মে.ওয়াট, জাপানী কোম্পানি সুমিতোমো গ্রুপের ১২০০ মে.ওয়াট।