রাজধানীর উন্নয়ন কার্যক্রম
নির্ধারিত সময়ে শেষ করা জরুরি

বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রাজধানীজুড়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির সংবাদ অনভিপ্রেত। উল্লেখ্য, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মেট্রোরেল, বিআরটি ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও থেমে থেমে চলছে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোনসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থার উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ। এসবের বাইরেও দেখা যায়-সড়ক, ফুটপাত ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে দুই সিটি করপোরেশন প্রায় সারা বছরই নগরীর যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়িতে লিপ্ত রয়েছে। বস্তুত বছরের পর বছর ধরে চলমান এ উন্নয়ন প্রক্রিয়ার জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন নগরবাসী, যা মোটেই কাম্য নয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান ও অলিগলি মিলে মোট সড়ক রয়েছে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার। উদ্বেগজনক হলো, এর মধ্যে অন্তত ৬০০ কিলোমিটার সড়কই ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা। সামান্য বৃষ্টিতেই এসব সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় বড় বড় গর্তের মধ্যে পড়ে যাত্রীসহ রিকশা, অটোরিকশা ছাড়াও বিভিন্ন যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হয়। পাশাপাশি রাজধানীর একাধিক সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের, যা থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা জরুরি।
খ্রিষ্টীয় ৭ম শতক থেকে ঢাকায় মানুষজন বসবাস শুরু করে। এরপর ১৬০৮ সালে ঢাকায় প্রথম মোগলদের পা পড়ে এবং ১৬১০ সালে ঢাকার নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীরনগর। মোগল-পরবর্তী যুগে ঢাকা প্রায় ১৯০ বছর ব্রিটিশ শাসনাধীন থাকে। পরবর্তী সময়ে ১৯৪৭ সালে ঢাকা পূর্ববঙ্গের রাজধানী হিসাবে পাকিস্তানের অন্তর্গত হয়। ১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ ঢাকাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী ঢাকাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করা হয়। আধুনিক ঢাকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান কেন্দ্র। এই শহরের অবকাঠামো উন্নত হলেও দূষণ, যানজট এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এখানে বিভিন্ন পরিষেবার অভাব প্রকট। একটি বড় শহরের জনঘনত্বের জন্য মানদণ্ড ধরা হয় প্রতি একরে ৭০ থেকে ৮০ জন, যা কেন্দ্রীয় শহর এলাকায় সর্বোচ্চ ১২০ পর্যন্ত হতে পারে। জাপানের টোকিও শহরের কেন্দ্রীয় এলাকার ওয়ার্ডগুলোর জনঘনত্ব একরপ্রতি ৯০-এর নিচে, অস্ট্রেলিয়ায় সিডনি শহরের সর্বোচ্চ জনঘনত্ব প্রতি একরে ৫৮ জন। ঢাকার লালবাগ, চকবাজারের জনঘনত্ব প্রতি একরে ৬০০ থেকে ৭০০ জন, যা পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ; অথচ সেখানে অবকাঠামো ও নাগরিক সুবিধা অত্যন্ত অপর্যাপ্ত। ঢাকা অত্যন্ত জনঘনত্বপূর্ণ হওয়ায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ভোগান্তিতে নাকাল হচ্ছেন নগরবাসী, তা বলাই বাহুল্য।
মূলত ঢাকার সমস্যা বহুমাত্রিক এবং কোনো দৈব-দুর্বিপাক নয়; বরং আমাদের হাতেই এসব সমস্যার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে। উদ্বেগজনক হলো, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমস্যাগুলো আরও প্রকট হচ্ছে, সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে নাগরিক ভোগান্তির মাত্রাও বাড়ছে। দুঃখজনক হলো, উন্নয়নের নামে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও রাজধানীবাসী এর কোনো সুফল তো পাচ্ছেনই না; উল্টো দুর্ভোগ ও ভোগান্তিই সার হচ্ছে তাদের। ২০১১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) দুই ভাগে বিভক্ত করার সময় বলা হয়েছিল, উন্নত নাগরিক সেবা প্রদানই বিভাজনের মূল্য উদ্দেশ্য। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে, নাগরিকদের ভোগান্তির মাত্রা হ্রাসের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে দুই ঢাকা সিটি করপোরেশনে দুজন নির্বাচিত মেয়র রয়েছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন কাউন্সিলররা। তাদের উচিত সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নগরীর উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানেরও উচিত, সড়ক খনন নীতিমালা ও নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা। একুশ শতকের রাজধানী ঢাকার জনজীবন সাংবাৎরিক দুর্ভোগ ও ভোগান্তির আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা থাকবে, এটা কিছুতেই হতে পারে না।