বৈশ্বিক চাল বাণিজ্যের কেন্দ্র হয়ে উঠছে ভারত

প্রাচ্যবাণী ডেস্ক
চাল উৎপাদনের দিক থেকে ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়, প্রথম চীন। কিন্তু রফতানিতে দেশটির অবস্থান প্রথম। দেশটি থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি ধারাবাহিকভাবেই বাড়ছে। চালের বৈশ্বিক বাণিজ্যে ভারতের অবস্থান ক্রমে শক্তিশালী হচ্ছে। চালের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় অর্ধেক এককভাবে সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে দেশটির সরকার। এজন্য উৎপাদন ও মজুদের পাশাপাশি রফতানির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিচ্ছে দেশটি। খবর রয়টার্স
তথ্য বলছে, গত বছর ভারতের চাল রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৯ শতাংশ। ওই বছর দেশটি থেকে রেকর্ড ১ কোটি ৪৭ লাখ টন চাল রফতানি হয়। রফতানীকৃত এ চালের বেশির ভাগই নন-বাসমতি, যার পরিমাণ ৭৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭ লাখ টনে।
অন্যদিকে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে দেশটি থেকে ১ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার টন চাল রফতানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ৬৫ শতাংশ বেশি। রফতানি বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত রাখতে চায় দেশটি। চলতি বছর ২ কোটি ২০ লাখ টন চাল রফতানি করতে চান দেশটির ব্যবসায়ীরা। লক্ষ্য অন্য তিন শীর্ষ রফতানিকারক থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানের সম্মিলিত রফতানিকে ছাড়িয়ে যাওয়া। বৈশ্বিক চাল রফতানির অনন্ত ৪৫ শতাংশ হিস্যা নিজেদের দখলে রাখা।
ভারতের চালের অন্যতম গন্তব্য হলো এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো। এসব দেশের বাজারে প্রধানত বাসমতি চাল রফতানি করেন দেশটির ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে প্রিমিয়াম বাসমতি চালের গন্তব্য প্রধানত মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের বাজার। তবে পুরনো ক্রেতাদের পাশাপাশি এ বছর অন্যান্য দেশ থেকেও ভালো ক্রয়াদেশ পাচ্ছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে চীন, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ এ তালিকায় প্রথম দিকে রয়েছে।
মার্কিন কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ মৌসুমে বৈশ্বিক বাজারে ৪ কোটি ৮৫ লাখ টনের মতো চাল রফতানি হতে পারে। আর ভারতের খাতসংশ্লিষ্টরা বলছে, মোট রফতানির প্রায় অর্ধেকই সরবরাহ করবেন দেশটির ব্যবসায়ীরা। ওলাম ইন্ডিয়ার রাইস বিজনেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিতিন গুপ্তা এ বিষয়ে বলেন, চলতি বছর নন-বাসমতি চালের রফতানি গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে। এ বছর ১ কোটি ৮০ লাখ টনের মতো নন-বাসমতি চাল রফতানি হতে পারে। প্রিমিয়াম বাসমতি ধরা হয়েছে ৪০ লাখ টনের মতো।
গত মার্চের পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে চালের চাহিদা বেড়েছে। এ সময় থেকে সরবরাহও বাড়িয়েছে ভারত। প্রতিযোগী থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে চাল বিক্রি করেছে দেশটি। রফতানিকারকভেদে টনপ্রতি ১০০ ডলার পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে তারা। তবে রফতানিকারকরা বলছেন, এ ছাড় মূলত সরবরাহ বিলম্বের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়া হয়।
চালের আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে উৎপাদনের পাশাপাশি বাড়তি মজুদেও গুরুত্ব দিচ্ছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। তবে রফতানির ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হিসেবে এখন বন্দরের অবকাঠামোগত সক্ষমতার অভাবকে ধরা হচ্ছে। বিশেষ করে চাল রফতানির জন্য ব্যবহার হওয়া অন্যতম বন্দর অন্ধ্র প্রদেশের কাকিনাদা অ্যাঙ্কোরেজ অবকাঠামোগত সুবিধায় বেশ পিছিয়ে রয়েছে। গত বছর এ বন্দরে পণ্য রফতানিতে জট দেখা যায়। পণ্যবোঝাই ও জাহাজীকরণ শুরু করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয় সে সময়। এজন্য অনেক ক্রেতা বিকল্প উৎস থেকে চাল আমদানি করেন। এ অবস্থায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে বন্দরটির সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয় সরকার। বিশেষ করে চাল রফতানির জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়। জাহাজীকরণের ক্ষেত্রে গভীর সমুদ্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়।
এ উদ্যোগের ফলে বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে বলে জানান ভারতের চাল রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিভি কৃষ্ণা রাও। তিনি বলেন, বন্দরে জাহাজ জট কমেছে। চাল রফতানির জন্য বন্দরের হ্যান্ডলিং সক্ষমতাও বেড়েছে। ফলে আগে যেসব ক্রেতা বিকল্প উৎস থেকে চাল আমদানি করেছেন, তারা ফের আমাদের কাছ থেকে চাল কেনা শুরু করেছেন।