বিনিয়োগে বিশেষ নজর

করহার বাড়ছে না, বিস্তৃত হচ্ছে আওতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রস্তাবিত বাজেটে কর হার না বাড়িয়ে কর জাল বা আওতা বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আরোপিত কর হার কমিয়ে মূল্য নিয়ন্ত্রণের কৌশল নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কর্মসংস্থান বাড়াতে ও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বিনিয়াগকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এসব লক্ষ্য নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব কাঠামোর খসড়া তৈরি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এটি চূড়ান্ত করতে আজ এবং আগামীকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন এনবিআর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ১২ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন, পেশাজীবী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া বাজেট প্রস্তাব এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পর্যালোচনা করেছেন। এর ভিত্তিতে একটি খসড়া কাঠামো দাঁড় করানো হয়। চলমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকট যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলংকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে প্রাধান্য দিয়ে খসড়াটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে।

এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিবারই প্রধানমন্ত্রী জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। যেমন করমুক্ত আয়ের সীমা, করপোরেট কর হার, পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ ইত্যাদি। এবারের বাজেটেও তার পরামর্শেই এসব চূড়ান্ত করা হবে। এর বাইরে আমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের মূল্য বিশেষত সয়াবিন তেলের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে রাখতে ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড়ের সুবিধা বাড়ানো হবে কিনা, সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনা দেবেন। সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসাবে অলিভ অয়েল, সূর্যমুখী তেল, রেপসিড অয়েল, কেনোলা অয়েলের শুল্ক হ্রাসের বিষয়েও সিদ্ধান্ত দেবেন তিনি। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এসব তেলের কর কমানোর জন্য এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আরও জানা গেছে, আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। করোনা পরবর্তী সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসায় বিদ্যমান কর কাঠামোতেই এ লক্ষ্য অর্জনযোগ্য। কেননা বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব পণ্যের দামই বেড়েছে। এতে রাজস্ব আয় বাড়ার সুযোগ রয়েছে। তাই বাজেটে কর হার বাড়ানোর চিন্তা থেকে সরে আসা হয়েছে। চলতি বছরের বাজেটের আদলেই হবে আগামী বাজেট। নতুন পদক্ষেপের মধ্যে স্থানীয় শিল্পকে কীভাবে কর ছাড় দিয়ে চাঙ্গা করা যায় সেই প্রয়াস থাকবে। এ জন্য কোন কোন খাতে ছাড় দেওয়া যায় তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

দেশীয় শিল্পের মধ্যে ইলেকট্রনিক্স, মোটরসাইকেল, ইস্পাত, প্যাকেজিং, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে নতুন করারোপ করা হবে না। পক্ষান্তরে অটোমেশন কার্যক্রম জোরদারের মাধ্যমে ব্যবসা সহজীকরণের উদ্যোগ থাকবে। কর আদায় বাড়াতে ভার্চুয়াল ইকোনমি, ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল ও অডিট কার্যক্রমকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ জন্য আয়কর আইনে নতুন ধারা যুক্ত করা হবে। সর্বোপরি আয়কর আইনকে যুগোপযোগী করে ব্যবসাবান্ধব করা হবে। পাশাপাশি বন্ডের অপব্যবহার বন্ধে অনিয়মের জরিমানা বৃদ্ধি, ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে ইএফডি (ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস) স্থাপন ও সেগুলো মনিটরিং কর্মকর্তাদের রোস্টারভিত্তিক পদায়নের দিকনির্দেশনা থাকবে।

এনবিআরের কর্মকর্তারা মনে করেন, করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়লে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী আয়করের আওতার বাইরে চলে যাবে। তাই এ সীমা বাড়ানোর বিপক্ষে এনবিআর। যদিও এটি নীতিগত সিদ্ধান্তের পরিবর্তে অধিকতর ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’। তাই বরাবরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। অবশ্য ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার কাছ থেকে খুব সামান্য রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। বেশিরভাগ আয়কর আদায় হয় ‘উৎসে কর’ হিসাবে, বাকিটা করপোরেট কর ও অগ্রিম আয়কর থেকে।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত দুই অর্থবছরে করপোরেট কর হার কমানো হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে বেসরকারি খাতকে সহায়তা করতে এ কর ছাড় দেওয়া হয়। আগামী বাজেটে করপোরেট কর আয়কর আদায় কার্যক্রম ঝুঁকিতে পড়বে বলে এনবিআর মনে করে। তাই করপোরেট কর কমানোর বিপক্ষে সংস্থাটি। তবে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।

Related Articles

Back to top button