বিএমইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র : সনদ নিতে এসে দালালের খপ্পরে

অনলাইন ডেস্ক

বিদেশে চাকরি পেতে শ্রমিকের জন্য প্রয়োজন বাংলাদেশ জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) দক্ষতা সনদ। এই সনদ পেতে বিএমইটির কেন্দ্রে তিন দিনের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এ জন্য সরকারি হিসাবে ভর্তি ফি দিতে হয় ৩০৫ টাকা। তবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হতে এসে অনেকেই দালালের খপ্পরে পড়ছেন। দালালদের দিতে হচ্ছে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা।

১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ-কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হতে যান চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৌহিদ উদ্দিন। দক্ষতা সনদ নিয়ে তিনি সৌদি আরবে যাবেন। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়েই তিনি দালালের খপ্পরে পড়েন। তিনি প্রাচ্যবাণীকে বলেন, ‘বাবুল খাঁ নামের একজন আমাকে বললেন, এখানে ট্রেনিং করে কোনো লাভ হবে না। এতে সময় ও টাকা দুটোই নষ্ট হবে। আর এখানে ভালো কোনো হোস্টেল নেই। তাই আপনাকে আমাদের এখানেই থাকতে হবে। এতে আপনার তিন দিনে তিন হাজার টাকা খরচ হয়ে যাবে। তার চেয়ে ৩০০ টাকা কম দিয়ে একেবারে সার্টিফিকেট নিয়ে নিন।’
সরেজমিন : বাংলাদেশ-কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চার থেকে পাঁচজন অবস্থান করছেন। কেউ ভর্তির জন্য সেখানে গেলেই ঘিরে ধরছেন। প্রথমে প্রশিক্ষণ ছাড়া সনদ পাওয়ার প্রলোভন দেখান তাঁরা। এ সময় সনদের জন্য জনপ্রতি দুই হাজার ৭০০ টাকা চাওয়া হয়। এতে যদি ভর্তিপ্রার্থী রাজি না হন তখন যেদিন ভর্তি হবেন সেদিনই প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন বলে তাঁরা জানান। সে সময় তাঁদের কাছ থেকে ৫০৫ টাকা চাওয়া হয়। যদি দুটির কোনোটিতেই ভর্তিপ্রার্থীরা রাজি না হন তবে থাকার ব্যবস্থার কথা জানানো হয়। বাইরে থাকার ব্যবস্থা কতটা খারাপ সেটিও তাঁরা ভর্তিপ্রার্থীদের সামনে তুলে ধরেন। এ সময় তাঁদের কাছে তিন হাজার টাকা চাওয়া হয়। এভাবে তাঁরা প্রশিক্ষণ নিতে আসা প্রবাসী কর্মীদের কাছ থেকে ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই পুরো ব্যবসাটি নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল খাঁ। তিনি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশে একটি মেস বাড়ি তৈরি করেছেন। সেখানে বাংলাদেশ-কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিতে আসা শিক্ষার্থীরা থাকেন। শুধু প্রশিক্ষণার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করেই থেমে থাকেননি বাবুল খাঁ, সনদ বিক্রির জন্য আরো চারজন নিয়োগ দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে বাবুল খাঁ নিজে উপস্থিত থেকে কাজটি করেন।
জানতে চাইলে বাবুল খাঁ প্রাচ্যবাণীকে বলেন, ‘আমাদের এখানে একটি মেস আছে। এখানে কেউ ভর্তি হতে এলে আমরা সেই মেসে থাকার প্রস্তাব দিই। পাশাপাশি সনদের বিষয়ও জানিয়ে থাকি। কারো মন চাইলে নেন, মন না চাইলে নেন না। আমরা কাউকে জোর করি না।’

একই অবস্থা দেখা যায় টেকনিক্যাল মোড়ে অবস্থিত শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রশিক্ষণ হয়। সেখানে নারীদের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও পুরুষদের নেই। ফলে পুরুষ প্রশিক্ষণার্থীরা স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম খানের মেসে থেকে প্রশিক্ষণ নেন। সেলিম খান প্রাচ্যবাণীকে বলেন, ‘এখানে যাঁরা প্রশিক্ষণ নিতে আসেন আমরা তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করে দিই। এখানে থাকা-খাওয়া ও প্রশিক্ষণে খরচ হয় দুই হাজার ২০০ টাকা।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ-কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছেও অভিযোগ এসেছে। তবে আমরা কখনো তাঁদের সেভাবে ধরতে পারিনি। আর এখন তো অনলাইনে সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। ফলে ওইভাবে সমস্যা হয় না। অনেক সময় বিএমইটির তালিকায় দেখা যায় নাম আছে, কিন্তু আমাদের তালিকায় নাম নিই। তখন আমরা এই সার্টিফিকেট বাতিল করে দিই।’

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা আরেকটা প্রশিক্ষণ চালু করার চিন্তা করছি। এই প্রশিক্ষণ তিন দিনের থাকলেও ওইটা সাত দিনের হবে। পাশাপাশি প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ চালু হবে। এটা নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। আপাতত মালয়েশিয়ার প্রশিক্ষণটি চালু হবে।’

Related Articles

Back to top button