পিজিসিবিতে টেন্ডার জালিয়াতি করে ১০০ কোটি টাকা লুটপাটের আয়োজন!

টেন্ডার শর্ত তৈরি করে দিয়েছে কোরিয়ান ঠিকাদার!

বিশেষ প্রতিবেদন
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবার নিকট বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সঞ্চালন এর ভিশন নিয়ে কাজ করার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান – পাওয়ার গ্রিড কোম্পানী অব বাংলাদেশ (PGCB ) এখন আর্ন্তজাতিক লুটেরাদের অভয়ারণ্য। আর্ন্তজতিক লুটেরাদের প্রত্যক্ষ সহযোগী হিসেবে কাজ করছে পিজিসিবিতে কর্মরত কতিপয় দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা । নব্য রাজাকার হিসেবে পরিচিত এসব দেশিয় লুটেরা দোষর বিশাল অংকের টাকার বিনিময়ে বিদেশি লুটেরা ঠিকাদারদের পরামর্শে তাদের দেয়া শর্ত সংযোজন করে আর্ন্তজাতিক টেন্ডার সিডিউল তৈরি করে যেখানে অন্য কেউ অংশগ্রহনও করতে পারেনা। ফলে প্রায় একক টেন্ডারের মাধ্যমে প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে লুট হয়ে যাচ্ছে। এ সব নিয়ে কেউ কোন উচ্চবাচ্য করলেই তার ওপর নেমে আসে বিভিন্ন প্রকার হয়রানী।
আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকারের দীর্ঘ সময় পিজিসিবি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক বিদ্যুৎ এবং পরবর্তী মূখ্য সচিব আবুুল কালাম আজাদ এবং এমডি ছিলেন মাসুম আল বিরুনী। মূল লুটপাটটা শুরু হয়েছে তখন এবং প্রায় হাজার কোট টাকা নিয়ে মাসুম আল বিরুনী এখন বিদেশে স্থা্য়ীভাবে বসবাস করছেন। সাম্প্রতিক একটি টেন্ডার নিয়ে পিজিসিবিতে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। পিজিসিবির Tenders No.: 27.21.0000.101.07.311.21.2532 , Contract Ref. No.: PGCB/AIIB/0088A-BGD/TL/P-2 ( Work: 400kV & 230kV underground XLPE cable Transmission lines) এর মাধ্যমে শত কোটি টাকা লুটপাটের আয়োজন নিশ্চিত করেছে প্রশাসন! বিদেশি ঋণের (AIIB) টাকায় দেশের লুটেরারা ধনী হওয়ার অয়োজন এটি। এ টেন্ডার দাখিল তারিখ এখন ৩১ আগষ্ট ২০২১ ইং।

উক্ত টেন্ডারে প্রায় ১০টি কোম্পানি আগ্রহ দেখালে ও জটিল টেন্ডার শর্তের কারণে কোরিয়ান একটি কোম্পানি ব্যতিত অন্যদের কোন সুযোগ নেই। পিজিসিবির একাধিক ঠিকাদার ও সৎ প্রকৌশলী জানিয়েছেন এ টেন্ডার সিডিউলটি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে কাজ করছে এমন একটি কোরিয়ান ক্যাবল কোম্পানির পরামর্শে এবং তাদের দেয়া জটিলশর্ত সংযোজন করে। এ কোরিয়ান ক্যাবল কোম্পানিকে কাজটি দেয়ার জন্য পিজিসিবির প্রশাসন মরিয়া চেষ্টা করছে। এ জন্য নানাহ অপ্রয়োজনীয় শর্ত সংযোজন করে অন্যান্যদের অংশগ্রহণকে শুধু জটিল নয় প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। আগ্রহী বিদেশি ঠিকাদাররা আংশিক সংশোধনের জন্য বারবার আবেদন করলেও পিজিসিবি প্রশাসন কারো আবেদনই গ্রাহ্য করছেনা।
পিজিসিবির দেয়া টেন্ডার শর্তের কারণে শুধু বাংলাদেশ নয় – ভারত, চীন, সিঙ্গাপুর এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের কোন ক্যাবল তৈরির কোম্পানিও ক্যাবল সরবরাহ পর্যন্ত করতে পারবেনা। ইউরোপের বিখ্যাত কোম্পানি NKT ও সরবরাহ পর্যন্ত করতে পারবেনা। অর্থাৎ কোরিয়ান কোম্পানিটি ব্যতিত বিশ্বের সকল কোম্পানির অংশগ্রহণের যোগ্যতাও নেই। দেশি-বিদেশি একাধিক আগ্রহী প্রতিষ্ঠান টেন্ডার শর্ত নমনিয় করে অধিক কোম্পানিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার জন্য পিজিসিবিতে আবেদন করলেও তারা অধিক দামে মনোপলি টেন্ডার দেখিয়ে কোরিয়ান কোম্পানিকে কাজ দেয়ার জন্য মরিয়া। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ১০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে তথা লুট হবে। এ টাকায় পকেট ভরবে পিজিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
একজন ঠিকাদার জানালেন – উক্ত টেন্ডারে দেয়া শর্ত (USD 88.0 million work , Overseas EPC Experience , 2500mm Mnf Exp for 10 yrs, 380kV or higher TL) সমুহ নিরর্থক। এত জটিল শর্ত না দিয়ে সরাসরি কোরিয়ান কোম্পানিকে কাজটি দিয়ে দিলেই হত নাটক না সাজিয়ে।
পিজিসিবির শীর্ষ প্রশাসন প্রথম দিকে দাবি করেন এ সব শর্ত ঋণ প্রদানকারী সংস্থা দিয়েছে। পরে অবশ্য বলেন এসব শর্ত পিজিসিবি বোর্ডের দেয়া। এ টেন্ডার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকটও অভিযোগ হয়েছে।
অভিজ্ঞ মহলের দাবি-উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা হলে এ টেন্ডারের মূল্য কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা কমে আসবে। অন্যথায় অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকা ভাগ ভাটোয়ারা হয়ে যাবে।
পিজিসিবির সদ্য সাবেক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা দাবি করেন পরিচালনা বোর্ড বা দাতা সংস্থা সব সময় চায় স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামুলক টেন্ডারের মাধ্যমে যোগ্য ঠিকাদার কাজ করুক যেন ভালো কাজ হয় আবার টাকাও যেন কম লাগে। কিন্তু দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীরা বোর্ড চেয়ারম্যানসহ সবাইকে বিতর্কিত করছে নিজেদের অসৎউদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য । তিনি এ ব্যাপারে সরাসির এমডিকে দায়ী করে বলেন – দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী ও বিদেশি লুটেরা সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে এখন এমডি স্বয়ং নিজেই। এমডি নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখেন কোন কাজ কারা করবে – টেন্ডার হল একটা সাজানো নাটক মাত্র। তিনি আরো বলেন কমপক্ষে এক ডজন কর্মকর্তা এখন পিজিসিতে কর্মরত রয়েছেন যারা বিদেশি কোম্পানিদের দেয়া টাকায় শত কোটি টাকার মালিক। প্রকল্প পরিচালক, প্রধান প্রকৌশলীসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্পদ তল্লাশী করলে দুদকের চোখও কপালে উঠবে !

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button