পদ্মা সেতু : সড়কে বাড়তি গাড়ির চাপ সামাল দিতে প্রস্তুত নয় বরিশাল

বরিশাল প্রতিনিধি
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর গোটা দক্ষিণাঞ্চলে যানবাহনের চাপ বাড়বে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের হাব খ্যাত বিভাগীয় শহর বরিশালে যানবাহনের চাপ বাড়বে কয়েকগুণ।
কিন্তু বাড়তি যানবাহনের চাপ সামাল দিতে সড়ক ব্যবস্থা নিয়ে এখনও প্রস্তুত নয় বরিশাল।
নগরের গড়িয়ারপার থেকে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত রাস্তাটি ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের অংশ হওয়ায় দুঃশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। ফলে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এবং আসন্ন ঈদেই এই সড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
যদিও এ নিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সম্প্রতি আয়োজিত বরিশাল নগরের অন্তর্ভুক্ত মহাসড়ক (ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী) প্রশস্তকরণসহ যান চলাচল উপযোগীকরণ বিষয়ক সমন্বয় সভা করেছে। যেখানে ফরিদপুর থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সার্ভিস লেনসহ ফোরলেন সড়ক ও বাইপাস সড়কের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে, বরিশাল নগরের গড়িয়ারপার থেকে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্তকরণের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। বরিশাল মেট্রোপলিটনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শেখ মো. সেলিম বলেন, বিআরটিএ এর হিসেবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে ১ হাজার নতুন বাসই শুধু এন্ট্রি ঘটাবে। এর ফলে সড়কের ওপর যানবাহনের লোড ডাবলেরও বেশি হবে। তবে প্রাইভেটসহ সব ধরনের যানবাহনের হিসেব করলে লোড এখনকার থেকে তিনগুণ বেশি হবে। কিন্তু সেই হিসেবে রাস্তার জায়গা কিন্তু তাৎক্ষণিক বাড়ছে না। আর ঈদের সময় এবারের দৃশ্যটা ভিন্নই হবে। আমরা আমাদের ডেডিকেশনের কতটুকু পারবো তা জানি না, তবে মাঠে থাকবো। আমরা আপাতত গড়িয়ারপার থেকে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত বেশ কিছু জায়গায় সাইড সোল্ডার বাড়ানো এবং তিনটি স্থানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য সড়ক ও জনপদ বিভাগকে বলেছি। পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর পাশাপাশি ট্রাফিক ভলিউম বাড়বে জানিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বরিশাল অঞ্চল) এ কে এম আজাদ রহমান বলেন, বিষয়টি ২০১৫ সালেই বিবেচনায় নিয়েছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তাই ফরিদপুর থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সার্ভিস লেনসহ মহাসড়ক ফোরলেনে উন্নিত করার চিন্তা-ভাবনা তখনই শুরু হয়। এর ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি এবং ডিজাইনও সম্পন্ন করা হয়েছে। অর্থের যোগানের মধ্য দিয়ে যার কাজও শুরু হবে। তবে এ প্রকল্পে সময়ের একটি বিষয় রয়েছে। তাই এখন সাময়িকভাবে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। ফরিদপুর থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কের যেসব জায়গাতে ট্রাফিক সৃষ্টি হয় সেগুলোকে শনাক্ত করা হয়েছে। বিশেষ করে বাজার এলাকাগুলোকে একটা ম্যানেজমেন্টের আওতায় আনার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। কারণ বেশিরভাগ যাত্রী বাজার এলাকাতেই ওঠানামা করে। তাই সেখানকার রাস্তাগুলো দুইপাশে প্রশস্ত করার প্রক্রিয়া নিয়েছি পাশাপাশি মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থানের বাক সহজ করা হবে। তিনি বলেন, আপাতত বাইপাস প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে তাই, বরিশাল শহরের ভেতরের সড়কের বিষয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী এখনই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় সিটি করপোরেশনের মেয়র আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
পদ্মা সেতু চালু হলে সড়কে যানবাহনের চাপ তিন থেকে চারগুণ বেড়ে যেতে পারে জানিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মো. ফারুক আহম্মদ বলেন, বরিশাল শহরের ভেতরে থাকা মহাসড়কের অংশে যানবাহন যদি স্মুথলি চলাচল করতে না পারে তাহলে নগরের সব বাসিন্দাই ভোগান্তি পোহাবে। কারণ ওই সড়কের যানজট গোটা শহরেই ছড়িয়ে পরবে। ইতোমধ্যে সড়কটি প্রশস্তকরণ ও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে মেয়র সাহেব বিভাগীয় প্রশাসনসহ সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে পৃথক ও সমন্বয়ে সভা করেছেন।
বরিশাল শহরের ভেতরে থাকা মহাসড়কের অংশ দিয়ে বিভাগের বাকি ৫ জেলায় গাড়ি চলাচল করে জানিয়ে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে এ সড়কটির ওপর চাপ বাড়বে কয়েকগুণ। যেহেতু বাইপাস সড়ক হতে সময় লাগবে তাই এ নিয়ে আগে থেকেই চিন্তা-ভাবনা করা উচিত ছিল,কিন্তু কেউ করেনি। তবে এখনও যদি আমরা উদ্যোগ নেই তাহলে মানুষের ভোগান্তি কমবে।
তিনি বলেন, গড়িয়ারপার থেকে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। আর আমরা সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে তাদের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার কাজ করবো। যেসব জায়গায় স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে, তা আমরাই করে দেবো। প্রয়োজনে আমার মায়ের নামে পার্কও ভেঙে ফেলা হবে। আর ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য নাগরিকদের সঙ্গে কথাও আমি বলবো। তবে এ সড়কটি প্রশস্ত হলে এর সুফল নগরবাসীসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসী পাবে। আমাদের এখানে ডেভেলপমেন্ট হতে যাচ্ছে, তাই আমাদের সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। আমাদের সবার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এক হলে যেকোনো কাজ এগিয়ে নেওয়া উচিত বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে।
এদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, বরিশাল শহরের গড়িয়ারপার থেকে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্ত করা এখন সময়ের দাবি। পদ্মা সেতু আমাদের দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জন্য প্রয়োজন ছিল। এখন এর সুফল পাইয়ে দিতে বরিশাল যাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে সবার খেয়াল রাখা উচিত। গরিয়ারপাড় থেকে দপদপিয়া সেতু পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণের কোনো বিষয় নেই। কিছু উচ্ছেদের প্রয়োজন তা সিটি করপোরেশন করে দিতে পারবে। কারণ ৫০ বছরেও যে সাগরদী ব্রিজ প্রশস্ত করার সাহস দেখাতে পারেনি কেউ তা বর্তমান মেয়রের আমলে করে দেখিয়েছে সিটি করপোরেশন। এছাড়া এখানে রাস্তার দুপাশে ৫ ফুট ৫ ফুট ড্রেন করে বেশ প্রশস্ত রাস্তা করা যায়,আর এটা করতে অর্থের প্রয়োজন, এখন সেটা জনপ্রতিনিধিরা সাপোর্ট দিলে দ্রুত পাওয়া সম্ভব।