নষ্ট হওয়ার পথে দেড় শতাধিক দুষ্প্রাপ্য বই

জাতীয় গণগ্রন্থাগারে সংরক্ষণ সুবিধার অভাব

  • ১০০ ও ২০০ বছরের পুরোনো বইও আছে
  • সহযোগিতা দিতে চায় ঢাবি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি

নিজস্ব প্রতিবেদক
সঠিক ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা না থাকায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে থাকা দেড় শতাধিক দুষ্প্রাপ্য বই নষ্ট হওয়ার পথে।

এর মধ্যে ফারসি ভাষায় রচিত কবি আবুল কাশেম ফেরদৌসী রচিত ‘শাহনামা’, হাতে তৈরি কাগজে লেখা পাণ্ডুলিপিতে জামীর লেখা ফারসি ভাষায় ‘ইউসুফ জুলেখা’, শেখ সাদীর লেখা ফারসি ভাষার ‘কুল্লিয়াতে সাদী’, নিজাম গঞ্জবির লেখা ‘শিরি ফরহাদ’, অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় রচিত ‘মীর কাসিম’, দুর্গাদাস লাহিড়ীর উপন্যাস ‘রাজা রামকৃষ্ণ’ ও ‘রাণী ভবানী’, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘বঙ্গদর্শন ৩য় বর্ষ’, রজনীকান্ত গুপ্ত রচিত ‘সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস’ (২য় ভাগ)-এর মতো ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের ১০০-২০০ বছরের পুরোনো কপি রয়েছে।

বইগুলোকে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সাধারণ নিয়মে রেখে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বইগুলোর বেশির ভাগেরই চারপাশ ইতোমধ্যে ক্ষয় হয়ে গেছে। কিছু বইয়ের কাগজ ঝরে পড়ার মতো অবস্থা। শিগগিরই দুষ্প্রাপ্য এই সম্পদ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে কয়েক বছরের মধ্যেই বইগুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে।

জান যায়, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের পাঠাগারগুলোয় সঠিক ও সর্বাধুনিক নিয়মে পুরোনো ও দুষ্প্রাপ্য বই বৈজ্ঞানিকভাবে সংরক্ষণের কোনো পদ্ধতি সংযুক্ত হয়নি। নেই আলাদাভাবে কোনো পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ বিভাগ।

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে দেড় শতাধিক দুষ্প্রাপ্য বইগুলো আলাদা করে রেখে তালিকা করেছি। এ বইগুলো জাতীয় সম্পদ। সনাতন যে পদ্ধতি আছে তাতে বইগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। আমরা চাইছি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করে বইগুলো সঠিকভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করতে।’

ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে কীভাবে দুষ্প্রাপ্য বই সংরক্ষণ করা হয়, তা জানতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এখানে অনেকটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এই ধরনের দুষ্প্রাপ্য বই সংরক্ষণ করা হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ডি-হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করে সেখানে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ ধরনের বইয়ের সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয় নেটের তৈরি বিশেষ আলমারি। পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের অ্যারোসল। তারপরও বইয়ের পৃষ্ঠা একটির সঙ্গে একটি লেগে যাওয়া, পাতার ক্ষয়, পোকামাকড়ের আক্রমণের ক্ষেত্রে প্যারাডাইক্লো বেইজিং ও থাইমল ব্যবহার করে ল্যাবরেটরিতে বিশেষ পদ্ধতিতে দুষ্প্রাপ্য বই সংগ্রহ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাণ্ডুলিপি শাখার ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান রিসার্চ শাহীন সুলতানা বলেন, সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এ ধরনের বই সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। কারণ বইগুলো জাতীয় সম্পদ। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর চাইলে আমরা ওই বইগুলোকে সঠিক পদ্ধতিতে যতটুকু সম্ভব সংরক্ষণ উপযোগী অবস্থায় নিয়ে আসতে সহযোগিতা দিতে পারি। শুধু তাই নয় আমরা বইগুলোর একটি করে ই-বুক ভার্সনও তাদের দেব।

শুধু একটি বিষয়, আমরা সেই ই-বুকের একটি কপি নিজেদের কাছে রাখব। আমরা ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরকম দুষ্প্রাপ্য কিছু বই এনে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের দুষ্প্রাপ্য বইগুলোর মধ্যে আরও আছে ১৮৮৪ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত মিসেস রবার্ট মোশ কিংয়ের ‘দ্য ডায়েরি অব এ সিভিলিয়ানস ওয়াইভ ইন ইন্ডিয়া ভলিউম ওয়ান’, ১৮৯০ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত গ্রে হিলের লেখা ‘উইথ দ্য বেদুইনস : এ ন্যারেটিভ অব জার্নিস অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ইন আনফ্রিকুয়েন্টেড পার্টস অব সিরিয়া। ১৮৯৩ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত মন্মথ নাথ দত্ত রচিত রামায়নের ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য রামায়ান’, ১৮৬০ সালে ম্যক্স মুলার রচিত ও লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘এ হিস্টোরি অব অ্যানসিয়েন্ট সংস্কৃত লিটেরেচার : দ্য প্রিমিটিভ রিলিজিয়ন অব ব্রাহ্মণস’, লন্ডন থেকে প্রকাশিত ১৮৩২ সালে রচিত জগেন্দ্র চন্দ্র ঘোষের ‘দ্য ইংলিশ ওয়ার্ক অব রাজা রামমোহন রায়’, ১৮১০ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত মহেশ চন্দ্র পাল রচিত ‘রামতাপনীয়োপনিষৎ’।

১৯১১ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ধরণী কান্ত লাহিড়ীর লেখা ‘ভারত-ভ্রমণ’, ১৯১৯ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ফকিরচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘তপস্যার ফল’, ১৯০২ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ভবানীচরণ ঘোষ রচিত নাটক ‘সরমার সুখ’ ও সরোজ কুমারী দেবীর কবিতার বই ‘অশোকা’, ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘বঙ্গীয়নাট্যশালার ইতিহাস ১৭৯৫-১৮৭৬’।

১৮৯২ সালে ডব্লিউ নিউম্যান রচিত ‘হ্যান্ডবুক টু কলকাতা’, ১৯৩৩ সালে সুবোধচন্দ্র মজুমদার রচিত গল্পের বই ‘বামনের দেশ’, ১৯০৩ সালে প্রকাশিত নবীনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় রচিত ‘আর্যসংগীত’। ১৯১২ সালে ফ্রানসিস সি টার্নার রচিত লন্ডন থেকে প্রকাশিত বই ‘এ শর্ট হিস্টোরি অব আর্ট’-যেখানে রয়েছে রোমান, গ্রিক, মিসর, ভারত, ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড ও স্পেনের শিল্পকলার ইতিহাস।

সূত্র : যুগান্তর

Related Articles

Back to top button