চাল ব্যবসায়ীদের চালবাজীতে অস্বস্তিতে খুলনার ক্রেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা
ডিম, মুরগি, সবজিসহ নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামের মুখে লাগাম পড়লেও খুলনার চালের বাজারে নেই কোনো সুসংবাদ। গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ৫০ টাকার চাল ৫৫ থেকে ৬৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এজন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীদের। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা দোষারোপ করছেন আমদানিকারকদের। বড় ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চালের দাম কমছে, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা একে অন্যকে দায়ী করলেও খড়গ পড়ছে সাধারণ ক্রেতাদের ওপর।
শনিবার (২৭ আগস্ট) খুলনার টুটপাড়া জোড়াকল বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজার, রূপসা সন্ধ্যা বাজার, ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরিবের চাল নামে পরিচিত স্বর্ণা (মোটা চাল) বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকায়। বিভিন্ন ধরনের চিকন চালের ক্ষেত্রেও প্রায় একই অবস্থা। ভালো মানের চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। নাজিরশাইল চালের দাম এখন প্রতিকেজি ৭৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়।
এদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে প্রতিকেজি চালে ৫ থেকে ১০ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা সঠিক কথা বললেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
বড় বাজারের ব্যবসায়ী কুন্ডু ট্রেডার্সের মালিক জয়দেব কুন্ডু বলেন, বাজারে চালের সরবরাহ ঠিক আছে, দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু তার দোকান থেকে চাল নেওয়া একজন ক্রেতা বলেন, গত এক মাস আগে যে চাল এক হাজার ৫৫০ টাকায় (২৫ কেজি) কিনেছেন শনিবার তাকে একই মানের একই পরিমাণ চাল তাকে ১৮০০ টাকায় কিনতে হয়েছে। সেইসঙ্গে কুলি ও পরিবহন খরচতো রয়েছেই।
নগরীর লবণচরা এলাকার রাইস মিল মালিক কাজী সোবহান বলেন, বাজারে চালের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে চালের দাম কমে গেছে।
তিনি বলেন, সরকারের ১৫ টাকা দরের চাল বিক্রির ঘোষণায় সব ধরনের চালের দাম কমে গেছে। চালের সরবরাহ বেড়ে গেছে কিন্তু বিক্রি নেই।
টুটপাড়া জোড়াকল বাজারের একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, বড় বাজারের মোকামগুলোতে চালের সরবরাহ আছে। সেগুলো তারা মজুদ করে রেখেছে। সেখান থেকে তাদের জানানো হচ্ছে চলের সরবরাহ কম। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে তারা চালের দাম বৃদ্ধি করেছেন। চালের দাম বৃদ্ধির জন্য তিনি সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন।
এই ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, আমরা বড় ব্যবসায়ীদের ওপর কথা বলতে পারি না। তারা যে দাম বলেন সেই দামেই চাল কিনতে হয়।
নগরীর ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারে চাল কিনতে আসা গৃহবধূ সাইদা আক্তার বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর থেকেই বাজারে সবধরনের নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বি দাম বেড়ে যায়। কিন্তু অন্য পণ্যের দাম কমলেও চালের দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাজারে প্রায় সব ধরনের চালের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
লবণচরা বাঁধ এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর আমেনা বেগম বলেন, খুলনার স্থানীয় একটি রাইস মিলের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে তিনি দিন শেষে যা মজুরি পান তা দিয়েই বাজার করে কোনো রকমে দিন চলে তার ৫ জনের পরিবারের। কিন্তু চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সেই মজুরি দিয়ে তার চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহিনুর আলম বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহতভাবে চলছে। নগরী, জেলা উপজেলা সব জায়গায় চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে অভিযোগ আসছে। আমরা প্রতিনিয়ত ছুটে চলছি। অভিযানে অনেক ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করছি। কিন্তু অসাধু কিছু ব্যবসায়ী ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে গিয়ে চালের দাম বৃদ্ধি করছে। তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।