গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বড় ভূমিকায় অগ্রণী ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
পদ্মা সেতুসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে বড় ভূমিকা রাখছে অগ্রণী ব্যাংক। বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলে এগিয়ে আসে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যাংকটি।

দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পে অর্থায়ন করেছে অগ্রণী ব্যাংক। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারেও অর্থায়ন করেছে ব্যাংকটি।

১৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে এই ব্যাংকের অর্থায়ন আছে, যেখান থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে দুই হাজার ৩৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

পদ্মা সেতু নির্মাণে অগ্রণী ব্যাংক একমাত্র বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহকারী। সেতুটির নির্মাণে এই ব্যাংক এ পর্যন্ত এককভাবে ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরবরাহ করেছে। দেশে প্রথম পিপিপির আওতায় নির্মিত ১১.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে বিনিয়োগ করার পদক্ষেপও নেয় ব্যাংকটি।

ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী ইশতেহার ছিল শহর থেকে গ্রামে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ১৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে এক হাজার ৭১৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে অগ্রণী ব্যাংক। বর্তমানে এসব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা দুই হাজার ৩৫৬ মেগাওয়াট। এ ছাড়া চালু করা হয়েছে নতুন ঋণপণ্য। এই সময়ে ব্যাংকটি কমপক্ষে ২৫টি নতুন ঋণপণ্য চালু করেছে। পাশাপাশি করপোরেট গ্যারান্টি ও সিন্ডিকেট ব্যবস্থার মাধ্যমে বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বড় অঙ্কের ঋণ দিচ্ছে।

জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন, তাতে অগ্রণী ব্যাংক সহযোগিতা করেছে। আমরা সে সময় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, সেতু তৈরিতে যত বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন হবে, অগ্রণী ব্যাংক একাই তা সরবরাহ করতে পারবে। পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে ডলারের চাহিদা মেটাতে আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমঝোতা চুক্তি হয়। এর অধীনে পদ্মা সেতুতে যত ডলার প্রয়োজন হবে, তা বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের সরবরাহ করার কথা। কিন্তু আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে এক ডলারও নিইনি। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় থেকে সব ডলারের জোগান দিয়েছি। ’

অগ্রণী ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘আমাদের রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় থেকে এ পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে ১.৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করেছি। এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে যত বৈদেশিক মুদ্রা লাগছে, এর পুরোটাই আমরা দিচ্ছি এবং সামনেও দিতে পারব। ’

পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু একটি অ্যাকাউন্ট থেকেই সব অর্থ লেনদেন হচ্ছে, সে কারণে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমেই দেশীয় ও বৈদেশিক সব অর্থই লেনদেন করা হচ্ছে। ’

অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ক্রান্তিকালে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে শামস-উল ইসলাম ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন। হাতে নেন ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা। তা বাস্তবায়নে আশানুরূপ সাফল্যও অর্জিত হয়।

সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের বিরাট ভূমিকা। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সরবরাহে অগ্রণী ব্যাংক ১৮টি ব্যাংক ও ২৭টি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চার হাজার ৫৩১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। পুঁজিবাজার শক্তিশালী করতে আইসিবিকে এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকা তহবিল সরবরাহ ছাড়াও ব্যাংকটি পুঁজিবাজারে এক হাজার ৬৫০ কোটি টাকা নিজস্ব বিনিয়োগ করেছে।

এ ছাড়া ইকুইটি পার্টিসিপেশনের আওতায় ব্যাংকটি পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডে ১৬৫ কোটি, কর্মসংস্থান ব্যাংকে ১৬ কোটি, আইসিবিতে ৬৩ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ৯ কোটি এবং বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডে ৩৭৫ কোটি টাকা ইকুইটি বিনিয়োগ করেছে। নারী উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে এসএমই খাতে ২১১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়।

করোনা মহামারির প্রভাবে ২০২০ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা কিছুটা কমেছে। এ সময় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থেকেছে। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জীভূত আমদানির পরিমাণ এক লাখ ৫০ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। একই সময়ে ক্রমপুঞ্জীভূত রপ্তানির পরিমাণ ৫৯ হাজার ১১ কোটি টাকা।

সূত্র : কালেরকণ্ঠ

Related Articles

Back to top button