এমপিওভুক্ত স্কুলে নেই শিক্ষার্থী, সাংবাদিক দেখে আনা হলো ২ কিশোরকে

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
গত ৬ জুলাই প্রকাশিত নতুন এমপিওভুক্তির তালিকায় ৪৮৫ নম্বর সিরিয়ালে নাম এসেছে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার ছেপড়াঝার আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। তবে বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী না এলেও এমপিওভুক্তির খবরে বিস্মিত এলাকাবাসী।

জানা গেছে, পাকা ভবনের বিদ্যালয়টি দাঁড়িয়ে থাকলেও নেই কোনো শিক্ষার্থী। এতে করে এই প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে এমপিওভুক্ত হয় তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে জন্ম নিয়েছে নানা প্রশ্ন।

খবরের ভিত্তিতে সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়নি কোনো শিক্ষার্থীকে। এদিকে ক্লাস রুমে সাংবাদিকরা ঘুরে দেখতে গেলে বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক দাইমুল ইসলাম বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা ২-৩ কিশোরকে ডেকে এনে একটি করে বই দিয়ে ক্লাসে বসিয়ে দেয়। এসময় তাদের কাছে পাওয়া যায়নি কোনো খাতা, কলম বা স্কুল ব্যাগ।

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) দুপুর সোয়া ১২টায় ছেপড়াঝার আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাঝে মধ্যে বিদ্যালয়টির অফিস খোলা থাকলেও নেই শিক্ষার্থী। কেউ স্কুল পরিদর্শন করতে এলে বাইরে থেকে অন্য শিশুদের এনে ক্লাসে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে সবার মনে প্রশ্ন কেমন করে ওই প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তির আওতায় আসে।

কথা হয় বিদ্যালয়ের ক্লাসে বসে থাকা বাঁধন নামে এক কিশোরের সঙ্গে। সে বলে, আমি স্কুলের পাশে খেলা করছিলাম, স্যার আমাকে ডেকে এনে ক্লাসে বসতে বলল, তাই বসে আছি। কলম, খাতা ও ব্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে পাশে থাকা আজম আলী নামে আরেক কিশোর বলে, বাড়িতে রেখে এসেছি। তবে স্কুলের বিষয়ে আরো কিছু জানতে চাইলে তারা এড়িয়ে যায়।

বিদ্যালয়ের পাশের বাড়ির বাসিন্দা জীবন ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, এই স্কুলে কিছু ছাত্র/ছাত্রী আছে তারা একসঙ্গে দুই স্কুলে ভর্তি হয়ে আছে। তারা অন্য স্কুলে ক্লাস করে থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যক্তি বলেন, এই স্কুল খোলা থাকলেও শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে থাকে ক্লাস রুম ও মাঠ। মাঝে মধ্যে অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের স্কুলে এনে পরীক্ষা দেওয়ায়। একটি শিক্ষিত জাতি গড়ার প্রতিষ্ঠানের এমন অবস্থা দেখে নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছে। আমি কারো ক্ষতি চাচ্ছি না। শুধু স্কুলটিতে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থী আশা করছি। এদিকে অচল এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তও হয়ে গেল।

বিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক ইসমাঈল হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আমরা সকাল থেকে বিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়েছি। এখন টিফিন দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বাড়িতে গেছে। তবে কখন টিফিন দেওয়া হয়েছে তার সদুত্তর দিতে পারেনি তিনি।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি বিদ্যালয়ের বাইরে আছি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতির বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, আপনারা যা পারেন লেখেন।

এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন পঞ্চগড় জেলা শিক্ষা অফিসার শাহীন আকতার।

Related Articles

Back to top button