আম-কাঁঠালের দেশে এখন চাষ হচ্ছে ৭২ প্রজাতির ফল

নিজস্ব প্রতিবেদক
দুই দশক আগেও আম আর কাঁঠালই ছিল দেশের প্রধান ফল। আর এখন দেশে চাষ হচ্ছে ৭২ প্রজাতির ফল। এ মুহূর্তে বিশ্বে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হারের রেকর্ড বাংলাদেশের। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, টানা ১৮ বছর ধরে দেশে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বাড়ছে। একই সঙ্গে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ চারটি ফলের মোট উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ধারাবাহিকভাবে ফলের এই উৎপাদন বৃদ্ধি খুবই আশার কথা। তবে ফল চাষে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবার ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো বড় বাধা। তারা বলেছেন, মানসম্পন্ন কলম-চারার অভাব রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বীজ থেকে ফল গাছ হওয়ায় ফলের ফলন ও গুণমান উভয়ই নিম্নমানের। এছাড়া বাংলাদেশের চাষের জমি দিন দিন কমছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, ফল পচনশীল হওয়ায় সংগ্রহ-উত্তর সঠিক পরিবহন ব্যবস্থা, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের অভাবে কৃষক ন্যায্যমূল্য পায় না। শুধু তাই নয়, প্রায় ২৫ শতাংশ ফল সংগ্রহ-উত্তর নষ্ট হয়ে যায়। এ বিষয়গুলোতে সরকারকে দ্রুত নজর দিতে হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ফল বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, গাজীপুর এ পর্যন্ত উষ্ণ এবং অব উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে চাষোপযোগী ৩০টি বিভিন্ন প্রজাতির ফলের ৬৫টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। যেগুলোর অধিকাংশ কৃষক পর্যায়ে সমাদৃত হয়েছে। দেশীয় ফলের চাষ সম্প্রসারণসহ উৎপাদন বৃদ্ধিতে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়, আমে সপ্তম ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে আছে। আর মৌসুমি ফল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। আম, কাঁঠালের বাইরে মৌসুমি ফলের মধ্যে আছে জাম, লিচু, কুল, কামরাঙা, পেঁপে, বেল, লেবু, আনারস, আতা, সফেদা, লটকন, তরমুজ, ফুটি ইত্যাদি। এছাড়া বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফল চাষ হচ্ছে।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ১৯ জাতের বিদেশি ফলের চাষ হচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে অ্যাভোকেডো, ম্যাংগোস্টিন, স্ট্রবেরি, কিউই, রাম্বুটান, লংগান, ল্যাংসাট, জাবাটিকাবা, শান্তল, পিচফল, আলুবোখারা, পার্সিমন, এগ ফ্রুট, সাওয়ার সপ, নাশপাতি, প্যাসন ফ্রুট, ড্রাগন ফ্রুট ও ডুরিয়ান অন্যতম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ১০টি বিদেশি ফল চাষকে সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচনা করে বলছে, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় পুষ্টিগুণ, বীজ ও চারার সহজলভ্যতা বিবেচনায় রাম্বুটান, চেরি, ড্রাগন, মাল্টা, থাই সফেদা, পার্সিমন, ম্যাংগোস্টিন, অ্যাভোকেডো, খাটো জাতের নারিকেল ও আরবি খেজুর সারা বছর দেশে ফলানো সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ফলের চাহিদা ২০০ গ্রাম। কিন্তু এর বিপরীতে আমাদের প্রাপ্যতা মাত্র ৭৪.৪২ গ্রাম। তবে আশার কথা হলো, মানুষ আগে অসুখ না হলে ফল খাওয়ার কথা ভাবতো না। কিন্তু এখন প্রতিদিন তাদের খাবারের তালিকায় থাকছে বিভিন্ন ধরনের ফল।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে সারা দেশে প্রায় ৭ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করে ১ কোটি ২১ লাখ টন ফল উৎপাদন হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৪ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশি-বিদেশি জাত মিলে উৎপাদিত ফলের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ ৮৯ হাজার টন।

এ প্রসঙ্গে কৃষিসচিব সায়েদুল ইসলাম গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, বর্তমানে প্রতি বছর দেশে যে হারে ফল উৎপাদন হচ্ছে তা খুবই আশার কথা; কিন্তু এখনো তা চাহিদার তুলনায় কম। অর্থাৎ আমাদের ফলের উৎপাদন আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের অনেক শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তা এখন বাণিজ্যিকভাবে ফল চাষে এগিয়ে এসেছে। যা আমাদের ফলের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের কৃষিকে আধুনিক কৃষিতে, বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর করতে। যাতে কৃষকরা চাষাবাদ করে লাভবান হয়। তিনি বলেন, আমরা এখন খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি পুষ্টি নিশ্চিতে জোর দিচ্ছি। চাহিদা অনুযায়ী ফল উৎপাদনের মধ্য দিয়ে খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত—দুটোই হবে।

Related Articles

Back to top button